আমাদের যেসব দিন গেছে, তা কি একেবারেই গেছে? এইতো কয়েকবছর আগেও পৌষের ঘ্রাণের সাথে মিশে থাকতো শীত। আমরা বুড়িগঙ্গার পাড়ে গিয়ে দেখতাম মুমূর্ষু একটা নদী। বেচে থাকতে চেষ্টা করছে প্রাণপণ এই মিথ্যে ভালোবাসার শহরটা কে আগলে ধরে। সেন্ট গ্রেগরী হাই স্কুলের সামনে ১৫০ বছরের বেশী পুরানো প্রিন্স বেকারীর তিন টাকার বাটারবানে ছিলো অসাধারণ স্বাদ। নইলে আমরা নাহিদ ভাইয়ের দোকানে বার্গারই খাইতাম। না, জুসি "টেন্ডার" কোনো বার্গার না, একটা বানের ভিতর ফ্রাই করা মুরগীর রান।
আমরা তাকায়া থাকতাম কখন একটা ঘুড্ডি বাকাট্টা হইবো তাই। স্কুলের মাঠে ঘুড্ডি পরলে কেউ আর ফ্রান্সিসের জানালায় তাকাইতো না। শাখারিবাজারে ঢুকলে তখন শাখের সুর আর ধুপের গন্ধ। মাতৃভান্ডারের গলিতে গেলেই আমার মন খারাপ হইয়া যাইতো। মনে হইতো ইস যদি আরো কিনতারতাম! বাতাসটা একটু পবিত্র ছিলো তখন। মাতৃভান্ডার থেইকাও চুর শিরিষ কিনতারো, গেন্ডারিয়ার দিকে থাকলে ব্রুসলির দোকানেও যাইতারো। একটা ড্যানিশের কৌটায় পিকনিক করার মতোন কইরা আমরা মাঞ্জা দিতাম। একটা বাটি নাটাই পাবার যে কি আনন্দ ছিলো, একটা ২ টাকার ঘুড্ডির প্রতি কি আবেদন ছিলো, সেইটা কি বাজাদরে বেইচা দিলাম আমরা?
স্কুলের এসেমব্লিতে দাড়াইলে লঙ্কা স্যারের এনাউন্সমেন্টে জানতাম, এই বছরও কেউ না কেউ ছাদের থেকে পরে মারা গেছে। বিংশ শতাব্দীতে শোকের আয়ু বড় জোড় এক স্ট্যাটাস। আর ৮টা পিরিয়ডের পর স্কুল শেষে বাসায় যাইয়া ঘুড্ডি উড়ানোর ধান্ধায় আমাদের মনে এসব দাগ কাটতো নাকি জানিনা।
আমাদের সাকরাইন হইতো মজার। এখনকার কর্পোরেট শো, বা ধুমধারাক্কা ধাক্কাধাক্কির ডিজে শো না। কোনো টিকেট কাটা শো না। আমরা দুয়ো দিতাম এক ছাদ থেকে আরেক ছাদ। এক ছাদে ঘুড্ডি উড়তো মেলা! ঘূড্ডি বন কইরাই সাইডে যাইতো গা যে যার মতো। কেউ একটা বাকাডা করলেই সবাই এক লগে চিল্লাইতো। মাইকে ভুয়া ভুয়া শব্দের মাঝে বাতাসেই থাকতো আনন্দ। বাতাসই নারাজ হয়া গেছে আমগো লগে। সাকরাইনে বাতাসই থাকে না। উচু উচু ছাদের মাঝে পিশে গেছে আনন্দ।
সেবার যখন রগ সুতার খুব চল, সোহরাব, সৈকত, রাশেদ ভাই'ই খালি মাঞ্জা দিলো। এক জিপ্পু নিয়া আমি একটা ঘুড্ডি খালি বন করছি। কোত্থে আয়া পরলো একটা বিশাল একটা দাবাঘুড্ডি। ইরফান ভাই একটা সানগ্লাস লাগায়া উঠলো ছাদে। রনাক আমারে কইতাছে সূতা ছাড়। আমি হুদাই ছাড়তাছি সুতা। ইরফান ভাই কইলো এইডা কাটতে পারলে নগদ একটা বেনসন। আমি খিচ্চা একটা ঘেরনা দিলাম! একদম আন্ধাগুন্ধি। ওমা পুরা ছাদ একলগে চিল্লাই কইলো বাকাড্ডা। আমার এক জিপ্পু ঘড্ডিটা সিনা টান কইরা উড়তাছে বাতাসে। সাথে আমিও উড়তাছি। এইরকম ডোপামিন রাশ আমার হয় না অনেক দিন।
তারপর মনে করেন, নাসিব যোহরের আযানটা দিলে, সব সাউন্ড যখন বন্ধ, তখন জালালরে ডাক দিতো। জালাল ওগো কবুতর দেখাশুনা করার লেইগা একটা বান্ধা পোলা। ও আইসা খাবার খাওয়াইয়া নাসিব একটা নাটাই আর হাসমত কারিগরের একটা ঘুড্ডি হাতে লইতো। নাটাই টা বয়সে কইতে গেলে ওরই সমান। একটা ঘুড্ডি দিয়া আমার নাসিব (বিশেষত), রনাক, সৈকত, মাঝে মাঝে তুরাগ, নয়ন ভাই আকাশটা সাফা কইরা ফালাইতো। নাসিবের চুলের জন্য নাসিব ঘুড্ডি উড়াইতে পারতেছে না, ছোটোখাটো একটা ছেলে রনাক, কিন্তু আসমান সমান কলিজা নিয়া বহু সূতা ছাইড়া পাশের এলাকাও সাফা কইরা দিতাছে, এইগুলি দেখার মতো দৃশ্য।
চারিদিকে আওয়াজ, ঘুড্ডি আমার খাড়া বাতাসে। ওমা টানতেই আছি ঘুড্ডি কাটেই না। নয়ন ভাই , এমন সময় কানে আসতাছে নয়ন ভাই চিল্লায়া কইতাছে, তাজিম এইডা আমি, ভুয়োদ্বারটা আমার। এইটা আসলে সবাই বুঝবেন না। রগ সূতা আসার পর বাইড়া গেলো টানামানি খেলা! তার চেয়ে বেশি আনন্দের বা সবচাইতে বেশি আনন্দের হইলো একটা বাকাড্ডা হওয়া ঘুড্ডির সূতার উপর সুতা বাঝাইয়া, বাটি নাটাই ঘুড়ায়া ঘুড্ডিটা ধরা।
সন্ধ্যায় পুরা ফরাশগঞ্জ আর সূত্রাপুরে আগুন। আরমান না অপূর্ব বা অনিক ভাই জানি
কেরোসিন মাইরা লাগায়া দিলো সৈকতের বুকে আগুন! ওমাহ, বুকের আগুন নিভেই না! আমরা ড্রাগনের মতোন কেরোসিন মারতেই থাকতাম। মারতেই থাকতাম। সম্পদ আমার মোছ দাড়ি পুইরা জ্বলতে থাকতো। দুই ফাহিম এসব দেখতো আর ভিডিও করতো। আমাদের কেরোসিন মারার ছবি তুইলা মানুষ প্রোফাইল পিকচার দিতো। সম্পদে আর জিসান ছিলো আমদের ফটোগ্রাফার। গোধুলীর আকাশ লাল থেকে কালো হইতেই হইয়া যাইতো হলুদ। শাখারাজারের পুলিশকে ফাকি দেয়া আতসগুলি শেষ একটা হাসি হেসে মারা যাইতো ভিলেনের মতো। আমরা গেস্টদের খাওয়াইতাম কবি নজরুলের সামনের সুলতান মামার চা। এখন আর সুলতান মামা নাই। সেই সময় ও নাই। আমাদের গেছে দিন একেবারেই গেছে!
So nostalgic 😔
Hey there! Hello...
I often read your posts, and tbh I like them...I had no idea that you are familiar with Shakrain. Good to see that. Do you reside in Bangladesh now?
Pardon the late reply.
Yup. Now I'm staying in Dhaka, Bangladesh.
পুরান ঢাকায় আমার মামা বাড়ি হওয়ার কারনে আমি কয়েকবার এই সাকরাইন সময় ঘুড়ি ওড়ানো দেখছি। সে অনেক আগের কথা। মামা ও তার বন্ধুরা মিলা উড়াইত। সেই একটা মজা এখন আর তেমন মজা দেখি না। সব ডিজে পার্টি নিয়েই ব্যস্ত। আর রাত হলেই পটকা ফাটানো শুরু কইরা দেয়। এখন কয়েকটা পোলাপান ঘুড়ি উড়াইতে পারে। আপনার কথাটা ঠিকই আছে উচু উচু ছাদের মাঝে পিশে গেছে আনন্দ। এখন সবাই ব্যস্ত।
হ্যালো ভাই। জীবনে প্রথম আমার পোস্টে কমেন্ট করলেন, আর আমি এক সপ্তাহ পর রিপ্লাই দিলাম! গিলটি লাগতেছে!
আসলেই ভাই। এখন মানুষ ঘুড়ি উড়াইতেই পারে না। সাবকালচারে ঢেকে গেছে কালচার। :(
Hi @tajimkhan, your post has been upvoted by @bdcommunity courtesy of @rehan12!
Support us by voting as a Hive Witness and/or by delegating HIVE POWER.
JOIN US ON
Congratulations @tajimkhan! You have completed the following achievement on the Hive blockchain and have been rewarded with new badge(s):
Your next target is to reach 6000 upvotes.
You can view your badges on your board and compare yourself to others in the Ranking
If you no longer want to receive notifications, reply to this comment with the word
STOP
Check out the last post from @hivebuzz:
Support the HiveBuzz project. Vote for our proposal!