বর্ষা শেষ শেষ হয়েও হচ্ছে না শেষ। খুব ভোরে বাড়ি থেকে বের হলে কুয়াশায় আচ্ছন্ন সবুজ ও সতেজ এক গ্রাম দেখা যায়৷ শীতকাল আসন্ন। কিন্তু গ্রামের খাল বিলগুলো এখনো পানিতে ভরে আছে। আর সেই পানিতেই কেউ কেউ এখনো মাছ ধরার চেষ্টা করে যাচ্ছে। একদমই যে মাছ পাওয়া যাচ্ছে না, তা না। নানা রকমের পাঁচমিশালি মাছ এখনোও মাছ ধরার জালগুলোতে ধরা দিয়ে যাচ্ছে। পানি থেকে জাল তোলার সময় জালের ভেতর লাফালাফি করতে থাকা মাছের দৃশ্যে হাসি ফুটে এইসব জেলের।
যদিও এদের জেলে বলাটা ঠিক হবে কিনা আমি জানি না। জেলে সম্প্রদায়কে কাছ থেকে দেখার সৌভাগ্য আমার হয়েছে। বিশেষ করে মাধবপুরের হরিপুর গ্রামের বাসিন্দারা। গ্রামের সবাই একসময় পেশা হিসেবে মাছ ধরাকেই বেছে নিত। সময়ের সাথে সাথে ধীরে ধীরে অন্যান্য পেশায় ছড়িয়ে পড়েছে। তবে পুরানো পেশা এখনো ভুলে যায় নি। আর সে কারণেই গ্রামের আনাচে কানাচে এখনো জেলে পরিবারকে বাস করে দেখা যায়। যারা খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠে নৌকা নিয়ে বেড়িয়ে পড়ে৷ আশেপাশের নদী ও বিলগুলোতে সারাদিন নৌকা নিয়ে ঘুরে বেড়ায় আর মাছ ধরে রাতের বেলায় বাড়ি ফিরে আসে। মাধবপুরে কিছুদিন থাকার সুবাদে তাদের গল্পগুলো শুনতে পেরেছিলাম আমি।
গত দুই একদিন বৃষ্টি হলেও আজ আকাশটা যথেষ্ঠ পরিষ্কার৷ সুন্দর ঝকঝকে নীল আকাশের নিচে দাঁড়িয়ে গ্রামের আকা বাঁকা রাস্তায় ঘুরে বেড়ানোর আনন্দটাই অন্যরকম। সবকিছু নতুন লাগে। এই যেমন লতায় মুড়ানো এই গাছটা। গ্রামের মেঠো পথের এক পাশে সগৌরবে দাঁড়িয়ে আছে৷ গাছের ফাঁকে ফাঁকে গোলাপি রঙের ফুল দেখা যাচ্ছে৷ এই গাছ কিংবা ফুলের নাম আমি জানি না। ফুলগুলো অনেকটা পাতার মতই। কিন্তু দেখতে খুব সুন্দর লাগছে।
অথবা এই ডালপালাহীন গাছটা। অনেকদিন আগে এই গাছটার ছবি শেয়ার করেছিলাম। তখন অবশ্য দেখে মনে হয়েছিল গাছটা মরে গিয়েছে৷ কারণ সেসময় ডাল পালা দূরে থাক, একটা পাতাও অবশিষ্ট ছিল না।৷ আর এখন নতুন করে পাতা গজানো শুরু হয়েছে। কী অদ্ভুত সুন্দর, তাই না?
প্রকৃতির সার্কেলটাও সুন্দর। প্রকৃতি নিজেকে সুন্দর করে সাঁজিয়ে নিতে পারে। আমরা মানুষেরাই বার বার সেই সৌন্দর্য্যে আঘাত করে তা নষ্ট করে দিই। পৃথিবীর প্রায় সব উন্নত দেশেই প্রকৃতিকে যথেষ্ঠ গুরুত্ব দেয়া হয়। কিন্তু আমরা যেন উলটো পথে হাঁটছি৷ যে যেভাবে পারি, প্রকৃতিকে ধ্বংস করছি৷ নগরায়নের নামে ইকোসিস্টেম নষ্ট করেছি। আর সেজন্যই তো সন্ধ্যার পর আর খোলা মাঠ কিংবা প্রান্তরে জোনাকি পোকার দেখা পাই না। অথচ একটা সময় সন্ধ্যা নামতে না নামতেই দলবেঁধে জোনাকি পোকারা সব চারপাশে চলে আসতো!
অথচ আমি যে গ্রামে আছি, সেখানে প্রতি সন্ধ্যায় জোনাকি পোকার মেলা বসে। গ্রামের পাশের ছোট খালপাড়ে সন্ধ্যা নামতে না নামতেই লাখ লাখ জোনাকি পোকা ছুটে আসে। মনের আনন্দে ঘুরে বেড়ায়। কিন্তু তাদের এই আনন্দ কতদিন থাকবে? নগরায়নের নামে এই গ্রামটাও কোনো না কোনো এক সময় আমাদের হাতে ধ্বংস হয়ে যাবে। বিলুপ্ত হয়ে যাবে জোনাকি পোকাদের দল!
আর কয়দিন গ্রামে থাকতে হবে জানি না। তবে গ্রামে থাকার এই মুহুর্তগুলো আমি বেশ উপভোগ করে যাচ্ছি। যদি সুযোগ থাকতো, তাহলে আমি আমার জীবনের বাকি জীবনটাও কোনো না কোনো গ্রামে কাটিয়ে দিতাম। শহুরে পাথুরে জীবনের প্রতি আমার আগ্রহ কম। তিনটা বছর ঢাকায় থেকে কিছুটা হলেও আমি শহুরে মেকি জীবনের প্রতি বিরক্ত। এই বিরক্ত হওয়ার পেছনেও বহু গল্প জড়িত। সেসব নাহয় পড়ে কোনো দিন অন্য কোনো এক লেখায় বলব। আজ আর সহজ সরল গ্রামের গল্পে সেইসব প্যাঁচানো ইতিহাস তুলে না ধরি।
তো যা বলছিলাম, ঝোপঝাড়ে পরিপূর্ণ এইসব গ্রামের রাস্তা ধরে হেঁটে বেড়াতে ভালই লাগে। কাজের ফাঁকে ফাঁকে তীব্র রোদ মাথায় নিয়েই আমি একা একা হেঁটে বেড়াই৷ হাঁটতে আমার ভালই লাগে। আর এজন্যই হয়তো সুযোগ পেলেই আমি একা একা বের হয়ে পড়ি। সবুজ সুন্দর দৃশ্যগুলোতে নিজের চোখ ও মন জুড়িয়ে নিই।
আহা সৌন্দর্য! এই সবুজের প্রতি আলাদা একটা ভালোবাসা কাজ করে। হয়তো গ্রামে সবুজের মাঝে বড়ো হয়েছি বলে।
আমাদের গ্রামের পাশেই সবুজে ঘেরা একটা মাঠ ছিলো।প্রতিদিন বিকেলে সেখানে ছুটে যেতাম ক্রিকেট খেলতে। এই ক্রিকেট খেলা নিয়ে যে মায়ের হাতে কতো মাইর খেয়েছি 😃 পুরো বিকেল জুড়ে খেলা শেষে পাশের বিশাল পুকুরটাতে সবাই মিলে গোসল করে বাড়ি ফিরতাম।
বর্ষাকালে বন্ধুরা মিলে মাছ ধরার বিষয়টা ছিলো আরো বেশি আনন্দের। কেউ বরশি, আবার কেউবা জাল দিয়ে মাছ ধরতাম। পরে সবাই একসাথে জোলাপাতি খেলতাম এই মাছ দিয়ে। সাথে সবার ঘর থেকে চাউল সংগ্রহ করে রান্না করা হতো।
কতোই না সোন্দর ছিলো দিনগুলো। আজ শহরে চার দেয়ালের মধ্যে থেকে সবুজের সৌন্দর্যটাকে ভীষণভাবে মিস করি, সাথে সময়গুলোকেও। আবার যদি ফিরতে পারতাম 🥹😥
শহরে থাকা মানে সারাক্ষণ চার দেয়ালে বন্দী থাকা। হয় বাসা, নয়তো অফিস অথবা বাস৷
ছবিগুলো অসাধারণ হয়েছে। চারিদিকেই সবুজের সমারোহ। এই সময়টাতেই হয়তো আমরা প্রাণ ভরে নিঃশ্বাস নিতে পারি। শহরের বাইরে যখন এই জায়গাগুলোতে যাওয়া হয় তখন এমনিতেও মনের ভিতর এক ধরনের শান্তি কাজ করে।
ছোটবেলার কত স্মৃতি যে গ্রামের রাস্তায় রয়েছে তা বলে শেষ করা যাবে না। আমার এখনো মনে আছে গ্রামের রাস্তাগুলো আগে তেমন একটা ভালো ছিল না। তাই যেখানেই যাওয়ার প্রয়োজন হতো হেঁটেই চলে যেতাম। যত দূরত্বই হোক না কেন সাথে যখন কাজিনরা থাকতো তাদের সাথে গল্প করতে করতে যখন হাঁটতাম রাস্তা কিভাবে যেন সহজেই ফুরিয়ে যেত।
গ্রামের ভাবটাই অন্যরকম। এজন্যই সুযোগ পেলে কারণে কিংবা অকারনেই গ্রামে চলে আসি আমি।
গ্রামের সৌন্দর্য মনকে শান্ত করে,তবে সেই সৌন্দর্য দেখার চোখ থাকতে হয়।
এমনও মানুষ আছে যারা জন্ম থেকে মৃত্যু গ্রামে বসবাস করে যায়,কিন্তু গ্রাম তাদের চোখে "ক্ষুদার্ত পেট" ছাড়া আর কিছুই না।
গ্রামের সৌন্দর্যটা বোঝা যায় শহরে কিছুদিন থেকে তারপর আবার গ্রামে গেলে।কারণ তুলনা ছাড়া আসলে সৌন্দর্যের সঠিক অনুধাবন করা সম্ভব নয়।
তবু ভালো আপনাদের গ্রামে এখনও জোনাকিরা সন্ধ্যায় উড়ে বেড়ায়,আমাদের গ্রামে এখন তা শুধুই স্মৃতি,ছেলেবেলার স্মৃতি।
জোনাকি পোকা এখন কোথাও তেমন একটা দেখা যায় না। এই গ্রামে মানুষের সংখ্যা অনেক কম। সেজন্য এখনোও গ্রাম গ্রাম একটা ভাব টিকে আছে৷
চারদিকে সবুজের সমারোহ।
মাঝে মাঝে শহরের বাইরের দিকে গেলে এরূপ সবুজের সমারোহের দেখা মিলে।
শহুরে পরিবেশ থেকে মাঝে মাঝে গ্রামে এসে একটু বিরতি নেয়ার দরকার হয়।
হ্যাঁ, একদম ঠিক।
Congratulations @reza-shamim! You have completed the following achievement on the Hive blockchain and have been rewarded with new badge(s):
Your next target is to reach 1000 replies.
You can view your badges on your board and compare yourself to others in the Ranking
If you no longer want to receive notifications, reply to this comment with the word
STOP
Check out the last post from @hivebuzz:
Support the HiveBuzz project. Vote for our proposal!